
নতুন ইংরেজী বর্ষের শুভক্ষণে উৎসবের আমেজ নিয়ে ৫১ তম মহান বিজয় দিবস’২০২২ উদযাপণ করলো বেনাপোল পোর্টথানা পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল সময় হল ১৯৭১ সাল। মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল, বেশ কয়েকজন এসপি সহ প্রায় সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্য বাঙ্গালীর মুক্তির সংগ্রামে জীবনদান করেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস হতেই তৎকালীন প্রদেশের পুলিশ বাহিনীর উপর কর্তৃত্ব হারিয়েছিল পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকার। পুলিশের বীর সদস্যরা প্রকাশ্যেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
তারা ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে ঢাকার রাজারবাগের পুলিশ লাইন্সে ২য় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বাতিল .৩০৩ রাইফেল দিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা। এই সশস্ত্র প্রতিরোধটিই বাঙ্গালীদের কাছে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরুর বার্তা পৌছে দেয়। পরবর্তীতে পুলিশের এই সদস্যরা ৯ মাস জুড়ে দেশব্যাপী গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন এবং পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী এক জরিপে জানা যায়, ১২৬২ জন পুলিশ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার(৩১ ডিসেম্বর) বেনাপোল স্থলবন্দরে অবস্থিত পোর্টথানা প্রাঙ্গণে এক আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বেনাপোল পোর্টথানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ কামাল হোসেন ভূঁইয় ৮৫,যশোর-১ শার্শা আসনের এমপি শেখ আফিল উদ্দিন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, প্রলয় কুমার জোয়ারদার,বিপিএম(বার),পিপিএম (পুলিশ সুপার,যশোর জেলা), শার্শা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান- বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক মঞ্জু, নির্বাহী অফিসার-নারায়ন চন্দ্র পাল, পুলিশের এ এসপি-নিশাত আল নাহিয়ান, যশোর সার্কেল(নাভারন),শার্শা উপজেলা আ.লীগ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক-অধ্যক্ষ ইব্রাহীম খলিল,শার্শা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-কবির উদ্দিন আহম্মেদ তোতা,বাহাদুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান-মফিজুর রহমান,পুটখালী ইউপি চেয়ারম্যান-আব্দুল গফ্ফার,বিশিষ্ঠ শিক্ষাবীদ ও বেনাপোল পৌর নাগরিক কমিটি’র আহবায়ক-মোস্তাক হাসান স্বপন,বিশিষ্ট সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী,মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড,ঢাকা কেন্দ্রীয় কমিটি’র সদস্য,বেনাপোল পৌরসভার মেয়র পদপ্রার্থী-ফারুক হোসেন উজ্জল,বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক-আব্দুল লতিফ, বিশিষ্ঠ সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী ও সিএন্ডএফ স্টাফ এসোসিয়েশন নির্বাচনে “সাধারণ সম্পাদক” পদপ্রার্থী-মাসুদ আক্তার(বাবু খান), যশোর জেলা যুব মহিলালীগের সাধারণ সম্পাদক-শামীমা আলম সালমা, মুক্তিযোদ্ধা-শাহ আলম,শার্শা উপজেলা যুবলীগ সভাপতি-অহিদুজ্জামান অহিদ,বেনাপোল পৌর আ.লীগ সভাপতি-এনামুল হক মুকুল,সাধারণ সম্পাদক-মোঃ নাসির উদ্দিন,এমপি’র পিএ-আসাদুজ্জামান আসাদ,শার্শা উপজেলা আ.লীগের কোষাধ্যক্ষ-অহিদুজ্জামান,শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-আব্দুর রহিম সরদার,ছাত্রনেতা-আল আমিন রুবেল,বেনাপোল ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক-সহিদুজ্জামান সহিদ,বেনাপোল পৌর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি- জুলফিকার আলী মন্টু, সাধারণ সম্পাদক-মোঃ কামাল হোসেন,ছোট আঁচড়া আ.লীগ নেতা-আব্দুল হামিদ,বেনাপোল পৌর যুবলীগ আহবায়ক-আহাদুজ্জামান বকুল, যুগ্ম আহবায়ক-জসিম উদ্দিন, বেনাপোল ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ইনচার্জ-রতন কুমার দেবনাথ,এ ছাড়াও বুদ্ধিজীবি, মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, কবি,সাহিত্যিক,সাংবামিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং বন্দর ব্যবহারকারী সিএন্ডএফ এসোসিয়েশন,সিএন্ডএফ স্টাফ এসোসিয়েশন সংগঠন সহ এলাকার সহস্রাধীক মানুষের ঢল নামে বিজয় দিবসের ঐ অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমান জোয়ারদার বলেন,আমরা হয়তো অনেকেই জানি না ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে হানাদার বাহিনীরা যখন আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই রাতে প্রথম হামলা চালানো হয় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে। কিন্তু একজন পুলিশও সেদিন ভয়ে মাথা নত করেনি। অকুতোভয় পুলিশ সদস্যরা সেদিন নির্ভিকচিত্তে ঝাঁপিয়ে পড়ে হানাদার বাহিনীর অত্যাধুনিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে।
অপারেশন সার্চলাইট নামে খ্যাত ঐ বীভৎস রাতের জন্য পাকিস্তানিরা পূর্ব থেকেই তাদের নীল নকশা এঁকেছিল। প্রতিদিন অসংখ্য সেনাবাহিনী, অস্ত্র-শস্ত্র আসতো পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। অথচ এ দেশের মানুষ কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি।আর ঠিক এরকম একটি ভয়ালো রাতেই আমাদের অকুতোভয় পুলিশ বাহিনী কাপুরুষের মতো পিছু না হটে যুদ্ধের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত বাতিল ৩০৩ রাইফেল দিয়ে সেদিন বীরসন্তানরা হানাদার বাহিনীর বিপরীতে তীব্র প্রতিরোধ তুলে ধরেছিল। পাক বাহিনীর ভারী অস্ত্রের গোলায় সেদিন ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল সবকটি পুলিশ ব্যারাক। শহীদের অমিয় সুধা পান করেছিলেন অসংখ্য নির্ভিক দেশপ্রেমিক।
স্বাগতিক বক্তব্য শেষে প্রধান অতিথি শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম একটি স্বাধীন-স্বার্বভৌম দেশের জন্য, দেশ স্বাধীন করেছি, আমাদের কাছে এ দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। দেশ এমনি এমনি স্বাধীন হয়নি। অনেক আন্দোলন, রক্ত এবং ত্যাগের বিনিময়ে এ দেশটি স্বাধীন হয়েছে, আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে দিনটি স্মরণ করি।
স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর অবদান উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’এর নামে রাজারবাগ আক্রমণ করে, পুলিশ বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। লাখ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ এবং ২ লাখের অধিক মা-বোনের সম্ভ্রমহানীর বিনিময়ে আজ আমরা স্বাধীন স্বার্বভৌম রাস্ট্র পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু’র স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। স্বল্প উন্নত দেশ থেকে আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তরিত হয়েছি।
এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আ,লীগ সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে হবে,এরজন্য শেখ হাসিনার হাত কে শক্তিশালী করতে আগামী সাংসদ নির্বাচনে “নৌকা” মার্কায় ভোট দেওয়ার অগ্রিম আহবান জানান। পোর্টথানা কর্তৃক আয়োজিত বিজয় দিবসের বিশাল ঐ আলোচনা সভার আয়োজক কমিটি’র পুলিশ কর্মকর্তা এবং সদস্যদেরকে শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক অভিনন্দন জানান শেখ আফিল উদ্দিন। আলোচনা শেষে সন্ধ্যায় একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।